প্রজন্ম রিপোর্ট
যশোরের চৌগাছায় তাহমিনা খাতুন (২৫) নামের এক প্রসূতির পেটে গজ-ব্যান্ডেজ ও হ্যান্ড গ্লোবস রেখে সেলাই করার অভিযোগ পাওয়া গেছে ডা. সুব্রত কুমার বাগচী ও ডা. নাহিদ সিরাজের বিরুদ্ধে। তারা দু’জনই চৌগাছা উপজেলা ৫০ শয্যা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক হলেও ওই প্রসূতির অপারেশন করা হয়েছে চৌগাছার পল্লবী ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। দীর্ঘ একমাস ১৬ দিন পরও রোগীর রক্তক্ষরণ বন্ধ না হওয়ায় গত রবিবার তহমিনাকে আবারো ওই ক্লিনিকে নিয়ে গেলে তাকে পুনরায় ড্রেসিং করে দেয়া হয়।
তখনও কোন কিছু পাওয়া না গেলে শুক্রবার গাইনি কনসালট্যান্ট ডা. রবিউল ইসলাম পরামর্শ দেন ওই রোগীর পিপি করতে হবে। এজন্য তাকে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেন। তহমিনার মা ও স্বামী অভিযোগ করেছেন ওয়াস করার পর বাথরুমে গেলে মলদার দিয়ে অপারেশনের সময়ে ডাক্তারের ব্যবহৃত গ্লোবস বাথরুমে পড়ে। সেটি তারা ক্লিনিক কর্তৃপক্ষকে দেখালে ক্লিনিকের মালিক গ্রাম্য ডাক্তার মিজানুর রহমান জোর করে রেখে দিলেও রোগীর স্বামী সেটির ছবি নিজের মোবাইলের ক্যামেরার ধারণ করে রেখেছেন। তারা আরো অভিযোগ করেছেন তাদেরকে আটকিয়ে রাখা হয়েছিল।
শুক্রবার দুপুরের পরে তহমিনাকে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করেছেন তার স্বজনরা। সেখানে গাইনি ওয়ার্ডে তাকে ভর্তি করা হয়েছে। তাহমিনার মা জাহানারা ও স্বামী আলমগীর হোসেন বলেন এক মাস ১৬ দিন আগে উপজেলার দিঘলসিংহা গ্রামের জয়নাল আবেদিনের মেয়ে তাহমিনা খাতুনকে চৌগাছার পল্লবী ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। সেখানে তাহমিনার সিজার করেন চৌগাছা ৫০ শয্যা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গাইনি চিকিৎসক ডা. সুব্রত কুমার বাগচী ও ড. নাহিদ সিরাজ। সেখানে তার একটি ছেলে সন্তান হয়। প্রসূতি তাহমিনার ব্লিডিং বন্ধ না হওয়ায় তারা কিøনিক কর্তপক্ষের নজরে আনেন বিষয়টি।
তখন তাদের পরামর্শ ঔষধ দিয়ে পরামর্শ দেয়া হয় বাড়িতে নিয়ে যান। আস্তে আস্তে রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্ত কিøনিক থেকে রিলিজ নিয়ে বাড়িতে চলে যাওয়ার ১ মাস ১৬ দিন পরও রক্তক্ষরণ বন্ধ না হওয়ায় গত রোববার তারা আবারো ওই ক্লিনিকে নিয়ে যান। এসময় ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ তাদের কাছ থেকে বন্ড নিয়ে ওই রোগীকে ড্রেসিং করে দেওয়ার পরও রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়নি।
পরে তাহমিনা বাথরুমে গেলে তার মলদ্বার দিয়ে অপারেশনের সময়ে ডাক্তারের ব্যবহার করা হ্যান্ড-গ্লোবস পড়লে তারা সেটি ক্লিনিক কর্তৃপক্ষকে দেখালে তারা সেটি নিয়ে নেন। তবে তাহমিনার স্বামী আলমগীর সেটির ছবি নিজের মোবাইলের ক্যামেরায় ধারণ করে রাখেন। শুক্রবার গাইনি কনসালট্যান্ট ডা. রবিউল ইসলামের নিকট রোগীকে দেখানো হলে তিনি তাদের বলেন রোগীর পেটের মধ্যে আরো কিছু থেকে যেতে পারে। তার পিপি করতে হবে। এজন্য রোগীকে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করতে পরামর্শ দেন তিনি।
পরামর্শমত তাহমিনাকে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ রিলিজ করলে শুক্রবার দুপুরে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে নেয়া হলে তাকে গাইনি ওয়ার্ডে ভর্তি রাখা হয়েছে । সর্বশেষ এ রিপোর্ট লেখার সময়ে ওই রোগীকে গাইনি ওয়ার্ডে ভর্তি রাখা হয়েছে। শুক্রবার হওয়ায় কোন পরীক্ষা করতে দেয়া হয়নি বলে রোগীর স্বামী আলমগীর হোসেন জানিয়েছেন। এর আগেও বিভিন্ন সময়ে রোগীদের ভুল চিকিৎসা দেয়ার অভিযোগ রয়েছে চৌগাছার এই ক্লিনিকটির বিরুদ্ধে।
এ বিষয়ে হাসপাতালের মালিক গ্রাম্য চিকিৎসক মিজানুর রহমান প্রথমে বিষয়টি অস্বীকার করলেও রোগী এবং স্বজনদের বক্তব্যের ভিডিও আছে বললে তিনি বলেন ১ মাস ১৩ দিন আগে রোগীটি ক্লিনিকে ভর্তি হয়। তখন ডা. সুব্রত বাগচী তাকে অপারেশন করেন আর ডা. নাহিদ সিরাজ ছিলেন অজ্ঞানকারী।
ব্লিডিং বন্ধ না হলে একমাস ছয়দিন পর তাকে আবারো ভর্তি করলে তাকে ওয়াস করা হয়। দুদিন ভর্তি থাকা অবস্থায় তার ছেলেটির নিউমনিয়া হয়। তাকে আবারো আলট্রাসোনো করেও কিছু পাওয়া যায়নি। কিন্তু রোগীর স্বজনরা নিজেদের অবস্থানে অনড় থাকে। যদি রোগীর পেটে গজ, ব্যান্ডেজ বা গ্লোবস থাকতো তাহলে সেটা রোগীর মলদ্বার দিয়ে বের হওয়া সম্ভব হতো না। তাকে অপারেশন করেই সেটা বের করতে হতো।
রোগীর স্বজনরা আমাদের কাছে মূলত টাকার দাবী করে, আমরা টাকা দিতে অসম্মত হওয়ায় তারা আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণা করছেন। তারা নিজেদের ইচ্ছায় গাইনি কনসালট্যান্ড ডা. রবিউল ইসলামকে দেখিয়েছে। এবং তারা ডা.রবিউল ইসলামের পরামর্শ মোতাবেক রোগীকে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করেছে।