প্রজন্ম ডেস্ক
অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, ৯৭ বছর ধরে গ্রামটিতে জনসংখ্যা একই। এখানে ১৯২২ সালে জনসংখ্যা ছিল মাত্র ১৭০০ আর ২০১৯ সালেও গ্রামের জনসংখ্যা ১৭০০-ই আছে। অর্থাৎ গত ৯৭ বছর ধরে গ্রামের জনসংখ্যা একই। ভারতের মধ্যপ্রদেশের বেতুল জেলার এই গ্রামের নাম ধনোরা।
এখানে কোনো পরিবারে দুটির বেশি সন্তান নেই। সবচেয়ে বড় ব্যাপার পুত্র সন্তান ও কন্যা সন্তানের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ নেই।
তবে এর পেছনে একটা মজার গল্প আছে।
জানা যায়, ১৯২২ সালে এখানে কংগ্রেসের একটি সভা হয়েছিল। যেখানে বক্তব্য রেখেছিলেন গান্ধির স্ত্রী কস্তুরবা গান্ধি। তিনি একটি স্লোগান দিয়েছিলেন, “সুখী জীবনের মানে ছোট পরিবার অর্থাৎ সুখী পরিবার,”। সেদিনের কস্তুরবা গান্ধির বলা সেই কথাটি অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছিলেন গ্রামবাসীরা। শুরু করেছিলেন পরিবার পরিকল্পনা।
এই গ্রামের বড়রা জানালেন, কস্তুরবা গান্ধির সেই কথা গ্রামবাসীদের মনে এবং মাথায় গেঁথে গিয়েছিল। তারপর থেকেই পরিবার পরিকল্পনার বিষয়টিতে অত্যন্ত সচেতনতা দেখা যায় গ্রামবাসীদের মধ্যে। ওরা পরিবার পরিকল্পনা শুরু করে তখন থেকে, বলতে গেলে প্রত্যেকটি পরিবারেই একটি বা দুটি সন্তানের বেশি তারপর থেকে আর কখনোই নেননি। এভাবেই ধীরে ধীরে গ্রামের জনসংখ্যা স্থির হতে শুরু করে। ছেলের আশায় একের পর এক সন্তান নেয়ার রীতির যে প্রচলন ছিল সেই রীতিকেও পিছনে ফেলে একটি বা দুটি কন্যা সন্তান হওয়ার পর সন্তান নেয়া বন্ধ করে দেন এই গ্রামের বাসিন্দারা।
স্থানীয় সাংবাদিক মায়াঙ্ক ভার্গব জানিয়েছেন, পরিবার পরিকল্পনার ক্ষেত্রে এই গ্রামটি এখন মডেল। ছেলে হোক বা মেয়ে দুটি বাচ্চা মানেই সুখী পরিবার পরিকল্পনা গ্রহণের পর এখানে লিঙ্গের অনুপাত বা ছেলে মেয়ের অনুপাত অন্য জায়গা থেকে অনেক ভালো। এখানে পুত্র এবং কন্যা সন্তানের মধ্যে কোন বৈষম্য নেই। গ্রামবাসীরা বলছেন ধনোরা গ্রামের আশপাশের অনেক গ্রামে ৫০ বছর আগের জনসংখ্যার থেকে এখন চার-পাঁচ গুণ জনসংখ্যা বেড়ে গেছে। তবে ধনেরো গ্রামের জনসংখ্যা এখনো ১৭০০ আছে।
এই গ্রামের এক স্বাস্থকর্মী জগদীশ সিং পরিহার জানালেন যে তাকে কোনদিনও গ্রামবাসীদের পরিবার পরিকল্পনা করার জন্য বাধ্য করতে হয়নি। এখানকার গ্রামবাসীরা এতটাই সচেতন যে দুটি বাচ্চাতেই তাদের পরিবার পরিকল্পনা সম্পন্ন করেন।